কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার লাজৈর গ্রামে প্রায় ৮ বছর আগে দুই শিশুকে গলাকেটে ও শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছিল। আলোচিত এই জোড়া খুনের মামলার ২ নম্বর আসামি এক নারী ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিলেন। রবিবার বিকেলে র‌্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লার কোম্পানি অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর পালিয়ে থাকার পর চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির দুর্গম একটি পাহাড়ি এলাকা থেকে ওই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত মাজেদা বেগম (৪৫) মুরাদনগর উপজেলার লাজৈর গ্রামের মো. সেলিম মিয়ার স্ত্রী।
র‌্যাব জানায়, পারিবারিক কলহের জেরে ২০১৪ সালের ২১ এপ্রিল লাজৈর গ্রামের মো. বিল্লাল হোসেনের ছেলে আরাফাত হোসেন (৬) ও শাহ আলমের ছেলে জসিম উদ্দিনকে (৭) গলাকেটে এবং শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়।

মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন বলেন, ঘটনার দিন ওই দুই শিশুকে হত্যা করে পালিয়ে যাওয়ার সময় লাজৈর গ্রামের বাবুল মিয়ার স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তারকে এলাকাবাসী আটক করে পুলিশে দেয়। বাবুলের বড় ভাই বিল্লাল হোসেন ইয়াসমিনের বড় বোনকে বিয়ে করেন। নিহত আরাফাত বিল্লালের ছেলে ও নিহত জসিম বিল্লালের চাচাতো ভাইয়ের ছেলে। ওইদিন হত্যাকারী ইয়াসমিন জনসম্মুখে স্বীকার করেন, তিনি ভুট্টাখেতে নিয়ে আরাফাতকে গলাকেটে ও জসিমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। পরে লাশ গুম করার উদ্দেশে খালের কচুরিপানার নিচে ফেলে রাখেন তিনি। ওই সময় ইয়াসমিন আরো স্বীকার করেন- এই জোড়া খুনে তার চাচি শাশুড়ী মাজেদা বেগম তাকে সহযোগিতা করেছেন।

মেজর সাকিব আরো বলেন, আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ইয়াসমিনকে এক নম্বর এবং মাজেদা বেগমকে দুই নম্বর আসামি করে অজ্ঞাতনামা আরো ২/৩ জনের বিরুদ্ধে নিহত আরাফাতের পিতা বিল্লাল হোসেন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর মাজেদা এলাকা থেকে পালিয়ে গিয়ে ঢাকা, গাজীপুর, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিজের নাম বদলে কখনো গৃহকর্মী, কখনো গার্মেন্টকর্মী আবার কখনো মহিলা ওঝার ছদ্মবেশে আত্মগোপন করে ছিলেন। সবশেষ তিনি গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের ছদ্মবেশে কাজ করে গা-ঢাকা দিয়ে ছিলেন। কিন্তু করোনা মহামারিতে চাকরি চলে গেলে ফটিকছড়ি একটি পাহাড়ি গ্রাম বাগমারায় রাবার বাগানের পাশে অবস্থিত তার ভাইয়ের বাসায় আত্মগোপনে যান। প্রযুক্তির সহায়তা এবং গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্যে সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রবিবার দুপুরে মাজেদাকে মুরাদনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান তিনি।